Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ছবি
শিরোনাম
ইতিহাস
বিস্তারিত

‘ হাওয়াখানা ‘

 

         কাকিনা জমিদার বাড়ি ও জমিদার বংশ: বর্তমানে কালিগঞ্জ উপজেলাধীন কাকিনা ইউনিয়নের কাকিনা মৌজায় এক কালে গড়ে উঠেছিলো বড় বড় ইমারত বিশিষ্ট জমিদার বাড়ি , যা কালের স্রোতে নিশ্চিহ্ন হোয়ে গেছে । কাকিনা জমিদার বাড়ির অতিত সৃতি ধারণ করে এখন নীরবে দারিয়ে রয়েছে শুধু মাত্র –‘ হাওয়াখানা ‘ । ইতিহাস বিশ্লেষণে জানা যায়, মহারাজা মোদ নারায়ণের সময় কাকিনা ছিল কোচবিহার রাজ্জাধিন একটি চাকলা । তৎকালে কাকিনার চাকলাদার ছিলেন ইন্দ্র নারায়ন চক্রবর্তী । ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে ঘোড়া ঘাটের ফৌজদার এবাদত খাঁ মহারাজা মোদ নারায়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে কোচ রাজ্যে অভিযান চালানোর সময় রঘু রামের দুই পুত্র রাঘবেন্দ্র নারায়ন ও রাম নারায়ন ফৌজদারের পক্ষ অবলম্বন করেন। মোগলদের এ অভিযানে কোচ বাহিনী পরাজিত হলে ইন্দ্র নারায়ন চক্রবর্তীকে কাকিনার চাকলাদার পদ থেকে অপসারন করা হয় এবং রাঘবেন্দ্র নারায়ণকে পরগণা বাষট্টি ও রাম নারায়নকে পরগণা কাকিনার চৌধুরী নিযুক্ত করা হয় । এভাবেই ইন্দ্র নারায়ন চক্রবর্তীর চাকলাদারি শেষ হোয়ে কাকিনায় রাম নারায়নের মাধ্যমে নতুন জমিদারীর সূচনা ঘটে । রাম নারায়ন চৌধুরীর পিতা রঘু রাম সম্পর্কে যতদূর জানা যায় , চাকলাদার ইন্দ্র নারায়ন চক্রবর্তীর সময় তিনি কাকিনা চাকলার একজন সাধারণ কর্মচারী ছিলেন। তবে রঘু রামের পিতা রমানাথ ১৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে কোচবিহার মহারাজা প্রাণ নারায়ণের সময় (১৬৩২-৬৫খ্রিঃ) রাজ দপ্তরে মজুমদারেরে কাজে নিয়োজিত ছিলেন । যা হোক , ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে রাম নারায়ণ কাকিনা পরগণার চৌধুরী নিযুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে কাকিনায় যে জমিদারীর সূচনা ঘটেছিল , জমিদার মহেন্দ্র রঞ্জনের সময় তার অপরিণামদর্শী খরচ ও বিলাসিতার কারণে তা ধ্বংসের মুখে পতিত হয়। মহাজনদের বকেয়া ও সরকারি রাজস্ব পরিশোধে সক্ষম না হওয়ায় ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে তার জমিদারী নিলাম হোয়ে যায় । ১৯২৬- ৩০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রায় নিঃস্ব অবস্থায় তিনি সপরিবারে কাকিনা ত্যাগ করে কাসিয়াং ( দার্জিলিং) –এ চলে যান । ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের দিকে সেখানেই তার জীবনাবসান ঘটে। কাকিনা জমিদার বংশ তালিকায় যে কয়েকজন জমিদারের উল্লেখ পাওয়া যায়, তারা হলেন- ১। রাম নারায়ণ চৌধুরী ( জমিদারীর সূচনা- ১৬৮৭ খ্রিঃ) ২। রুদ্র রায় চৌধুরী ৩। রসিক রায় চৌধুরী ( অপুত্রক অবস্থায় মারা যান । স্ত্রী অলকানন্দা পরে জমিদারী চালান এবং দত্তক পুত্র গ্রহণ করেন ) ৪। রাম রুদ্র রায় চৌধুরী ( দত্তক পুত্র। ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জমিদারী চালান) ৫। শম্ভু চন্দ্র রায় চৌধুরী ( মৃত্যু – ১৮৬৮ খ্রিঃ) ৬। মহিমা রঞ্জন রায় চৌধুরী (দত্তক পুত্র । জন্ম -৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৫৩ খ্রিঃ এবং মৃত্যু -১ এপ্রিল ১৯০৯ খ্রিঃ) ৭। মহেন্দ্র রঞ্জন রায় চৌধুরী ( ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে নিলামের মধ্য দিয়ে জমিদারীর সমাপ্তি ) বর্ণিত জমিদার গণের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সময় ধরে জমিদারী পরিচালনা করেন শম্ভু চন্দ্র রায় চৌধুরী । বড় বড় ইমারত বিশিষ্ট জমিদার বাড়ি তাঁর সময়ই নির্মিত হয়েছিলো বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। জমিদার মহিমা রঞ্জন চৌধুরীর আমলে এখানে একটি যাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো । ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পর তদীয় পুত্র মহেন্দ্র রঞ্জন রায় চৌধুরী জাদু ঘরের স্থলে ‘মহিমা রঞ্জন মেমোরিয়াল হাই ইংলিশ স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে ‘কাকিনা মহিমা রঞ্জন সৃতি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়’ নামে পরিচিত ।

 

শৈশব কবি শেখ ফজলল করিম

শেখ ফজলল করিম ১২৮৯ বঙ্গাব্দের (১৮৮২ সাল) ৩০ই চৈত্র বর্তমান লালমনিরহাট জেলার[১] কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা বাজার গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা নাম আমিরউল্লাহ সরদার এবং মাতার নাম কোকিলা বিবি। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ফজলল করিম ছিলেন দ্বিতীয়। তার পারিবারিক ডাক নাম ছিল মোনা[১]

ছোটবেলা থেকেই কবির লেখা-পড়ার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ ছিল, এমনি কি তার যখন তিন-চার বছর তখন তিনি বাড়ী থেকে পালিয়ে স্কুলে চলে যেতেন। তিনি পাঁচ বছর বয়সে কাকিনা স্কুলে ভর্তি হন। প্রায় প্রতি বছরেই বার্ষিক পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের জন্য তিনি পুরস্কৃত হতেন। ফজলল করিম মাত্র ১২ বছর বয়সে তার প্রথম কবিতার বই সরল পদ্য বিকাশ হাতে লিখে প্রকাশ করেন।[১] ষষ্ঠ শ্রেণীতে তাকে রংপুর জেলা স্কুলে ভর্তি করা হলে তিনি তা ছেড়ে কাকিনা স্কুলে ফিরে আসেন। সেখান থেকেই ১৮৯৯ সালে মাইনর পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেন। এরপর তাকে আবারও রংপুর জেলা স্কুলে দেওয়া হলে স্কুলের বাধাধরা পড়াশোনায় মন বসাতে না পেরে তিনি সেখান থেকে আবারও ফিরে আসেন এবং জ্ঞানার্জনে উৎসাহী হয়ে প্রচুর বই পড়তে থাকেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বসিরন নেসা খাতুনের সাথে ফজলল করিমের বিয়ে হয়।[১] এরপর অনেক কারণে তার স্কুল জীবনের ইতি ঘটে।

সাহিত্য চর্চা

কবির প্রথম বই সরল পদ্য বিকাশ তার ১২ বছর বয়সেই হাতে লিখে প্রকাশিত হয়েছিল। রংপুর জেলা স্কুলে পড়ালেখায় মন বসাতে না পেরে তখন তিনি প্রচুর এবং বিভিন্ন রকমের বই পড়তে শুরু করেন। পড়াশোনা ছাড়ার পর পড়াশোনা, জ্ঞান চর্চা, সংবাদপত্র পাঠে তিনি অনেক সময় ব্যয় করতেন। এ সময় আধ্যাতিক ও সাহিত্যচিন্তা তাকে গভীরভাবে দোলা দিতেতথাকে। সাহিত্য চর্চার সুবিধার্থে তিনি নানা পত্রপত্রিকা, পুস্তক সংগ্রহ করতেন। সে সমস্ত সংগ্রহ নিয়ে তিন ১৮৯৬ সালে নিজ বাড়িতেই করিম আহামদিয়া লাইব্রেরী নামে একটি ব্যক্তিগত পাঠাগার তৈরি করেন। এভাবে সাহিত্য চর্চা করতে গিয়ে তিনি অনেক ঠাট্টা উপহাসের শিকার হন কিন্তু প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তির কারণে দূর্বার গতিতে চলতে থাকে তার সাহিত্য চর্চা।

কর্মজীবন

সাহিত্যের প্রতি তার প্রচন্ড আগ্রহের কারণে কর্মজীবন ফজলল করিমকে তেমন ভাবে আকর্ষণ করতে পারে নি। ছোটবেলাতেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা আয়ত্ত করেছিলেন যা তিনি কাজে লাগাতেন গ্রামের দরিদ্র মানুষের সেবায়। তিনি বাড়িতে বসেই দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা করতেন। সাহিত্য সৃষ্টি, প্রকাশনা ও সাধনার প্রতি ফজলল করিমের প্রচন্ড ইচ্ছা এবং আগ্রহ থেকে তিনি নিজ বাড়ীতে আর পীরের নামানুসারেসাহাবিয়া প্রিন্টিং ওয়ার্কস নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।

সাহিত্যকর্ম

শেখ ফজলল করিমের পরিচিত মূলত কবি হিসেবে হলেও তার জীবনী ও প্রকাশনা অনুসন্ধান করলে দেখা যায় তিনি কবিতা বা কাব্য ছাড়াও বহু প্রবন্ধ, নাট্যকাব্য, জীবনগ্রন্থ, ইতিহাস, গবেষণামূলক নিবন্ধ, সমাজ গঠনমূলক ও তত্ত্বকথা গল্প, শিশুতোষ সাহিত্য, নীতি কথা চরিত গ্রন্থ এবং অন্যান্য সমালোচনামূলক রচনা লিখেছেন। পুঁথি সম্পাদনার ক্ষেত্রেও তার পরিচিত পাওয়া যায়। তার প্রকাশিত অপ্রকাশিত প্রায় ৫৫টি গ্রন্থ রয়েছে।

ফজলল করি রচিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যেতৃষ্ণা (১৯০০), প্ররিত্রাণ কাব্য (১৯০৪),ভগ্নবীণা বা ইসলাম চিত্র (১৯০৪), ভুক্তি পুষ্পাঞ্জলি (১৯১১) অন্যতম। অন্যান্যের মধ্যে উপন্যাস লাইলী-মজনু, শিশুতোষ সাহিত্য হারুন-আর-রশিদের গল্প, নীতিকথা চিন্তার চাষ, ধর্মবিষয়ক পথ ও পাথেয় প্রভৃতি অন্যতম।

এছাড়া প্রচারক, নবনূর, কোহিনূর, বাসনা, মিহির ও সুধাকর, ভারতবর্ষ, সওগাত, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, আরতি, কম্পতারু শিশু সাথী, মোসলেম ভারত মাসিক মোহাম্মদী, বসুমতী ইত্যাদি পত্রপত্রিকায় শেখ ফজলল করিমের অসংখ্য কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, উপন্যাস, অনুবাদ প্রকাশিত হয়। সমকালীন মুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে তার অবস্থান ছিল প্রথম সারিতে।

গদ্য ও পদ্য উভয় শাখায় তাঁর সমুজ্জল উপস্থিতি। ভাবের গভীরতাকে সরলভাবে উপস্থাপন করা ফযলল করিমের লেখনীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তিনি হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে কাজ করে গেছেন।

শেখ ফজলল করিম রচিত উল্লেখযোগ্য পদ্য

  • সরল পদ্য বিকাশ
  • পরিতান কাব্য
  • চিন্তার চাষ
  • পাথ পাথেয়
  • গাঁথা
  • ভক্তিপুষ্পাঞ্জলি
  •  

পুরস্কার

জীবনকালেই তিনি বহু পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন। বাসনা সম্পাদনার সময় রোমিও-জুলিয়েট সম্পর্কিত তার একটি কবিতা পাঠ করে তৎকালীন হিন্দু সাহিত্যিকেরা তাকে বাংলার শেক্সপিয়র আখ্যা দেন। পথ ও পাথেয় গ্রন্থের জন্য তিনি রৌপ্যপদক লাভ করেন। ১৩২৩ বঙ্গাব্দে নদীয়া সাহিত্য সভা তাকে সহিত্যবিশারদ উপাধিতে ভূষিত করেন। চিন্তার চাষ গ্রন্থের জন্য তিনি নীতিভূষণ, কাশ্মীর শ্রীভারত ধর্ম মহামন্ডল তাকে রৌপ্যপদকে ভূষিত করে। এ ছাড়া তৎকালীন বাংলার বিভিন্ন

প্রতিষ্ঠান তাকে কাব্য ভূষণ, সাহিত্যরণ, বিদ্যাবিনোদ, কাব্যরত্নাকর, ইত্যাদি উপাধিত ও সম্মানে ভূষিত করে।

 

মৃত্যু কাল

১৯৩৬ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

 

  1.